ইসকন কি জঙ্গি সংগঠন? জেনে নিন সারা বিশ্বে ইসকন কী করে। ইসকন কত সমাজসেবামূলক কাজ করে!!!
বাংলাদেশে এখন মানুষের মুখে মুখে ইসকনের নাম। সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে সংঘটিত হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিশাল জনসমাবেশ করে আট দফা দাবি জানানোর পর থেকে ইসকনকে নিয়ে অপপ্রচার চলছে। তাদের ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক পেইজ হ্যাক করা হয়েছে। তাদের জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে মৌলবাদী থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত তাদের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয় দেখানো হচ্ছে।
ইসকন কোন জঙ্গি সংগঠন নয়। ইসকন হলো আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, যা ইংরেজিতে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে ভারতীয় ধর্মগুরু অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইসকন সারা বিশ্বে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করে।
ইসকনের সদর দপ্তর ভারতের নদীয়া জেলার মায়াপুরে অবস্থিত। বিশ্বব্যাপী প্রায় দশ লক্ষ অনুসারী আছে ও ৮৫০টি মন্দির আছে। বিশ্বের ১৫০টির অধিক দেশে ইসকনের উপস্থিতি আছে। ইসকনের ইউরোপে ১৩৫টি, এশিয়াতে ৮০টি, অষ্ট্রেলিয়াতে ১০টি, উত্তর আমেরিকাতে ৬৮টি, দক্ষিণ আমেরিকাতে ৬০টি এবং আফ্রিকাতে ৬৯টি সেন্টার আছে। আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে ৪.৮ বর্গ কিলোমিটার জায়গার উপরে বিশাল ইসকন নিউ বৃন্দাবন ক্যাম্পাস অবস্থিত; এটা ১৯৬৮ সালে নির্মিত।
আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে মনোনীত টালসি গ্যাবার্ড (তুলসী গ্যাবার্ড) ইসকনের অনুসারী। আমেরিকার বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফোর্ড মোটর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার নাতির ছেলে Alfred Brush Ford ওরফে অম্বরিশ দাস ইসকনের অনুসারী এবং Temple of the Vedic Planetarium এর প্রোজেক্ট চেয়ারম্যান। বিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত জনপ্রিয় গায়ক এবং গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনও ইসকনের অনুসারী হয়েছিলেন এবং যুক্তরাজ্যে ইসকনকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিলেন। ১৯৭১ সালে এই জর্জ হ্যারিসন স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজন করেছিলেন।
ইসকন যদি জঙ্গি সংগঠন হতো তাহলে আমেরিকার বুকে বিশাল ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে পারতো না কিংবা এই সকল বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ইসকনের অনুসারী হতেন না।
ইসকন শুধু ধর্ম প্রচার করে না। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে। এ বছর বাংলাদেশে বন্যার সময় বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে; সেগুলো ভুলে যাবার কথা নয়।
ইসকন ফুড ফর লাইফ (জীবনের জন্য খাদ্য) নামক নিরামিষ খাদ্য ত্রাণ সংস্থা পরিচালনা করে। এই সংস্থা ৬০টির বেশি দেশে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের মাঝে প্রতিদিন বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করে।
কাজেই ইসকনের প্রতি ঘৃণা নয়, ইসকনকে ভালোবাসুন।
পরিশেষে, ইসকনের নিরামিষ রেস্টুরেন্টে একবার খেয়েছেন কি? অত্যন্ত সুস্বাদু খাবা
র পরিবেশন করে।
বিশ্বের সকল প্রাণী সুখী হোক। বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক।
তথ্যসূত্র:
ইসকন: ISKCON | ISKCON at USA | Alfred Brush Ford | George Harrison | ফুড ফর লাইফ Food For Life


:

: